রোববার,
২৬ মে ২০১৩ঃঅতিগোপনে অনুমোদন দিয়েছে সরকার : কী কারণে এই পোর্ট নির্মাণের
অনুমোদন দেয়া হয়েছে তা না দেখে বলা যাবে না -শাজাহান খান : পোর্টের বিষয়ে
সরকার অবগত আছে : যুগ্ম সচিব আলাউদ্দিন : সংবিধান পরিপন্থি এবং স্বাধীনতা
সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি -শমসের মোবিন চৌধুরী
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : নারায়ণগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার পোর্ট নির্মাণ
করছে ভারত। সরকার অতিগোপনে এই বন্দর নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। ভারতকে দেয়া
ট্রানজিট সুবিধার অংশ হিসেবেই এই পোর্ট নির্মাণ করা হবে। এই পোর্টের
প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ১০ মে দরপত্র আহ্বান
করেছে ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতকে এই বন্দর নির্মাণের
অনুমোদন দেয়ার কথা গতকাল ইনকিলাবের কাছে স্বীকার করেছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী
শাজাহান খান।
নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে কুমুদিনি
ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ৪৬ একর জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে এই পোর্ট। দরপ্রস্তাব
জমা দেয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৭ জুন বিকাল ৩টা পর্যন্ত।
অতিগোপনে সরকারের ভারতীয় এই পোর্টের অনুমোদন দেয়াকে বিপদজনক হিসেবে দেখছেন
বিশেষজ্ঞরা। একে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছেন
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী গতকাল সন্ধ্যায় ফোনে
ইনকিলাবকে বলেন, কী কী শর্তে বা কারণে এই পোর্ট নির্মাণের অনুমোদন দেয়া
হয়েছে তা না দেখে বলা যাবে না। আগামীকাল (আজ) সচিবালয়ে গিয়ে ফাইলপত্র দেখে
তা বলতে হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আলাউদ্দিন গতকাল
সন্ধ্যায় ইনকিলাবকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের পোর্টের বিষয়ে সরকার অবগত আছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কুমুদিনি কল্যাণ ট্রাস্টের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভারত এই
অভ্যন্তরীণ বন্দর নির্মাণ করবে।
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক
কূটনীতিক শমসের মোবিন চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় ইনকিলাবকে বলেন, কী ধরনের
চুক্তির মাধ্যমে সরকার এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে তা না জেনে মন্তব্য করা
ঠিক হবে না। তবে সরকার বিষয়টি গোপন রেখে সবার মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।
বিদেশের সাথে কোন বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বা সমঝোতা হলে তা অবশ্যই
প্রকাশ করতে হবে। গোপনে কোন কিছু করলে সেটা নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এটা
অবশ্যই সংবিধান পরিপন্থি এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্যও হুমকি।
জ্বালানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু
মোহাম্মদ বলেছেন, এটা ভারতকে দেয়া ট্রানজিট সুবিধারই অংশ। গোপনে সরকার
ভারতকে পোর্ট নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এটাই প্রমাণ করে এখানে স্বচ্ছতা
নেই। এটা বিপদজনক। জনগণের কাছে আড়াল করেই বাংলাদেশে অন্য দেশ পোর্ট নির্মাণ
করছে। ট্রানজিটের ক্ষেত্রেও একই লুকোচুরি হচ্ছে। ভারত একদিকে বাংলাদেশের
চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জেলখানা বানাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশকে তাদের
সড়ক বানাচ্ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের বন্দর নির্মাণ কোনভাবেই মেনে
নেয়া যায় না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত দরপত্রের
টার্মস অব রেফারেন্সে উল্লে¬খ করা হয়েছে, বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে ৪৬ একর
জমি রয়েছে কুমুদিনি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটি
ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ওই জমিতে একটি অভ্যন্তরীণ নৌ-কনটেইনার টার্মিনাল
নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। টার্মিনাল নির্মাণে কারিগরি ও বাণিজ্যিক
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ভারত সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ
দরপত্র আহ্বান করেছে। দরপত্র বিবরণীতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আওতাও তুলে ধরা
হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জের প্রস্তাবিত টার্মিনালের স্থান
পরিদর্শন করে একাধিক প্রতিবেদন জমা দেবে। এসব প্রতিবেদনে স্থানীয় বিভিন্ন
শিল্পপণ্যের উৎপাদন, বর্তমান প্রবৃদ্ধি, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার প্রকৃত চিত্র
তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের শক্তি, সম্ভাবনা, দুর্বলতা ও ঝুঁকি
বিষয়েও বিশ্লে¬ষণ করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের আশপাশে আর কোনো অভ্যন্তরীণ
টার্মিনাল রয়েছে কিনা, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তাও গুরুত্ব পাবে।
চলমান কনটেইনার টার্মিনালের সক্ষমতা, কনটেইনার ও কার্গোর ধরনসহ অবকাঠামো ও
ব্যয় বিষয়ে আলোকপাত করতে হবে। জমির দাম, তার উন্নয়ন খরচ, অবকাঠামো নির্মাণ
ও যন্ত্রপাতি স্থাপনে সম্ভাব্য ব্যয়ের একটি চিত্র তুলে ধরতে হবে
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে থাকবে কনটেইনার হ্যান্ডলিং,
টার্মিনাল ভাড়া, ভ্যালু এডেড সার্ভিসসহ অন্যান্য খাত থেকে সম্ভাব্য আয়ের
বিবরণীও। এছাড়া টার্মিনাল পরিচালন ব্যয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা,
বিদ্যুৎ, গ্যাস, কর ও শুল্কসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ের হিসাবও সংযুক্ত করতে হবে।
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, কার্যাদেশ পাওয়ার ১৪ সপ্তাহের মধ্যে সম্ভাব্যতা
যাচাইয়ের কাজ শেষ করতে হবে। ছয় সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন
পার্ট-এ, পরবর্তী তিন সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন পার্ট-বি,
পরবর্তী তিন সপ্তাহে খসড়া প্রতিবেদন (পার্ট-এ, পাট-বি ও পার্ট-সি) এবং
পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
ভারতের
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ
বিষয়ে আদি ভারতীয় পরামর্শক/পেশাদারদের কাছ থেকে সিলগালা দরপত্র আহ্বান
করছে। সেকশন অফিসার (ডিপিএ), রুম নং ৩১৩১, বি উইং, জওহর লাল নেহেরু ভবন
(জেএনবি), নয়া দিল্লি থেকে ২ হাজার রুপির পে-অর্ডারের বিনিময়ে পাওয়া যাবে
দরপত্রের ডকুমেন্ট। এ জন্য ‘পে এন্ড একাউন্টস অফিসার, মিনিস্ট্রি অব
এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স, নয়া দিল্লি¬’ বরাবরে এই পে-অর্ডার জমা দিতে হবে।
দরপত্র জমা দেয়ার সময় এর সঙ্গে এক লাখ রুপির ইএমডি ড্রাফট ‘দ্য পে এন্ড
একাউন্টস অফিসার, মিনিস্ট্রি অব এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স’ বরাবর জমা দিতে
হবে। দরপত্র জমা দিতে হবে দুই-বিজ্ঞপ্তি (টু বিড) সিস্টেমে। এর একটি হবে
টেকনিক্যাল। আরেকটি মূল্য বা খরচ বাবদ।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে
নারায়ণগঞ্জে কনটেইনার টার্মিনাল তৈরির পরিকল্পনা করে কুমুদিনি ওয়েলফেয়ার
ট্রাস্ট। সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠন করা হয় কুমুদিনি কনটেইনার
টার্মিনাল। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের পাশাপাশি ভারতীয় আমদানি-রফতানিকৃত
পণ্য লোড-আনলোডে নারায়ণগঞ্জ কনটেইনার টার্মিনাল স্থাপনই এর প্রধান
উদ্দেশ্য। বেনাপোল বন্দরের বিকল্প হিসেবে এ টার্মিনাল ব্যবহার করা যায়
কিনা, তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
www.dailyinqilab.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন