বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩

আমাদের স্বাধীনতাঃ পর্দার এপার ওপার


আমাদের স্বাধীনতাঃ পর্দার এপার ওপার

কেমন করে একটি জাতি উন্নতি সাধন করতে পারে যদি না তারা তাদের নিজেদের বিকৃত ইতিহাসের বদলে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে? আর যদি একেবারে নাই জানতে পারে তাহলে তো আর কোন কথাই নেই!!! ইতিহাস মুলতঃ সেই জিনিস যা থেকে একজন ব্যক্তি বা একটি জাতি সঠিক এবং গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি লাভ করতে পারে। এই ইতিহাসই সঠিক বন্ধু কে আর সঠিক শত্রুটিই বা কে এবং সেই সাথে চলার পথে সফলতার সত্য আর সঠিক রাস্তাটিই বা কোনটি তা আমাদের একেবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে চিনিয়ে দেয়।আর তাই সঠিক ইতিহাস জানা প্রতিটি জাতির প্রতিটি ব্যক্তিবর্গের জন্য অত্যন্ত জরুরী। আর এই জন্যই পবিত্র কুরআন, আল্লাহর রাসুল (সা) এর জীবনী, সাহাবি (রা) দের বিশেষ করে খোলাফায়ে রাশেদীন দের জীবনী, খালিন বিন ওয়ালিদ (রা), সালাউদ্দিন আইউবি, তারিক বিন যিয়াদ, সুলতান মাহমুদ ফাতিহ (রহ) দের মত মহাপুরুষদের জীবনী, তাঁদের সমসাময়িক ঘটনাবলির ইতিহাস ইত্যাদি জানা খুবই জরুরী। তবে আজকে মূলতঃ এই লেখাটি লিখার উদ্দেশ্য হল আপনাদের একটি অসাধারণ বই এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। বইটির নাম হল- "চেপে রাখা ইতিহাস", লিখেছেন আল্লামা গোলাম আহমদ মোর্তজা।বইটির ডাউনলোড লিংক হল http://www.sendspace.com/file/6mcpwz এছাড়া বইটি বাজারেও কিনতে পাবেন ইনশাআল্লাহ। বিভিন্ন প্রিন্ট অনুযায়ী কমিশন সহ দাম ১৫০-২০০ টাকা। অসাধারণ এই বইটি যদি আপনি না পড়েন, তাহলে আপনি বিশাল কিছু একটা হয়ত মিস করবেন! এর আগে আপনাদেরকে আমাদের প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ "আমাদের স্বাধীনতাঃ পর্দার এপার ওপার" বিশেষ ভাবে পড়তে বলেছিলাম যেটি সম্পর্কে বলেছিলাম ব্রিটিশ আমল থেকে ৭১ পর্যন্ত অনেক অজানা ইতিহাস এখানে পাবেন (যারা মিস করেছেন তারা এখান থেকে ডাউনলোড করুন http://www.mediafire.com/download/u2bhb837buincu5/আমাদের+স্বাধীনতাঃ+পর্দার+এপার+ওপার.zip )। তবে এই "চেপে রাখা ইতিহাস" আপনাকে নিয়ে যাবে আরও হাজার বছর আগে। এই ভারতবর্ষে হিন্দু জাতির আগমন, এখানকার অধিবাসীদের উপর এবং অন্যান্য নিম্নবর্ণের হিন্দুদের উপর তাদের অত্যাচার এর নমুনা পরবর্তীতে মুসলিমদের আগমন এবং জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে একেবারে ভারত বিভক্ত হওয়া পর্যন্ত অনেক অজানা ইতিহাস এই বইয়ে ঠাই দিয়েছেন শ্রদ্ধেয় লেখক। এই ভারতবর্ষে মুহাম্মদ বিন কাশিম, সুলতান মাহমুদ, মুহাম্মাদ বিন তুঘলক, বাবর, হুমায়ুন, শেরশাহ, জাহাঙ্গির,শায়েখ আহমদ ফারুক সেরহিন্দ, আওরঙ্গজেব, শায়েস্তা খান, হায়দার আলী, টিপু সুলতান, নবাব সিরাজুদ্দউলা থেকে শুরু করে শাহ ওলিউল্লাহ, সৈয়দ আহমদ বেরলভি, সৈয়দ নিসার আলী তিতুমির, মাওলানা আলাউদ্দিন, হাজি শরিয়তউল্লাহ, মজনু শাহ এর মত কিংবদন্তীদের জীবনচরিত, সমসাময়িক ঘটনা এখানে আলোচিত হয়েছে। এখানে আপনি পাবেন গৌরবোজ্জ্বল মুসলিম শাসকদের শাসনামল, পরবর্তীতে ইংরেজদের আগমন এবং কিভাবে তারা হিন্দু বেইমান রাজাকারদের পৃষ্ঠপোষকতায় এখানকার ক্ষমতা হাসিল করল সেই রক্তঝরা ইতিহাসগুলি। আরও জানতে পারবেন কেন আজও সেই মুসলিম শাসক এবং অন্যান্য সম্মানিত মুজাহিদরা ইংরেজ এবং তাদের দোসরদের দ্বারা ভারতের বিকৃত ইতিহাসে ঘৃণিত এবং শিবাজির মত সন্ত্রাসী, সম্রাট আকবরের মত ইসলাম বিদ্বেষী, ঈশ্বরচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, রাজা রাম মোহন রায় , রবীন্দ্রনাথ দের মত ইংরেজদের পা চাট গোলামরা কেন সম্মানিত! এই বই আপনাকে নিয়ে যাবে সেইসব রক্ত আর অশ্রু ঝরা দিন গুলিতে, সেই পলাশী, সিপাহি বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ,ফকির বিদ্রোহ ইত্যাদি ইত্যাদি সংগ্রাম গুলির রক্তক্ষয়ী দিনগুলিতে! যেন আপনার চোখের সামনে দেখতে পাবেন সেই ইংরেজ খ্রিষ্টান আর তাদের হিন্দু দালালদের সহায়তায় সেই সব নির্যাতন, যুলুম এর ঘটনাগুলি। কতই না রক্ত ঝরেছে, কত লক্ষ লক্ষ মুসলিমদের হত্যা করা হয়েছে, কতই না অজস্র মা বোনের সম্ভ্রম তারা কেড়ে নিয়েছে, কত অগণিত সম্পদ তারা লুট করেছে আর পাচার করেছে ইংল্যান্ডে!!!!! যাই হোক কোথা বেশি বাড়াবনা। আপনাদের কাছে একান্ত অনুরোধ বইটি আপনারা পড়বেন ইনশাআল্লাহ। অবশ্য এই লেখকের অন্যান্য বইগুলি যেমন- ইতিহাসের ইতিহাস, বাজেয়াপ্ত ইতিহাস, বজ্র কলম, ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায় ইত্যাদি ইত্যাদি সবগুলি বইই অসাধারণ! আপনারা ইচ্ছা করলে এগুলিও সংগ্রহ করে পড়তে পারেন ইনশাআল্লাহ। ভাল থাকুন।



সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

মিথ্যে স্বাধীনতা থেকে মুক্তির পথে





বিসমিল্লাহহির রাহমানির রাহিম


মিথ্যে স্বাধীনতা থেকে মুক্তির পথে

আবার এসেছে বিজয়ের মাস। চারিদিকে শুধু স্বাধীনতা স্বাধীনতা রব। কেউ বা হাজির হয়েছে স্বাধীনতার সোল এজেন্ট এর দাবি নিয়ে। কেউ বা উপস্থিত হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষকের দাবি নিয়ে। এদিকে আবার ডাক দেওয়া হয়েছে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের। “এবারের সংগ্রাম যুদ্ধপরাধিদের বিচারের সংগ্রাম।” “এবারের সংগ্রাম রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম”। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার করে জাতিকে আরেকটি স্বাধীনতা এনে দিতে চায়। এর আগে আমরা ৪৭ এ পেয়েছিয়াম একবার স্বাধীনতা। এরপর ৭১ এ, এখন ১২ তে, এরপর আবার কবে?

আসলে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক আর বিজয় ঘোষণা অনির্দিষ্ট কালের জন্য চলতেই থাকবে যতদিন না আমরা স্বাধীনতা শব্দের প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারব। স্বাধীনতার বণিকেরা আমাদের কাছে স্বাধীনতা শব্দটা একটা আবেগীয় শ্লোগান হিসাবে উপাস্থপন করেছে এবং করেই চলেছে। আমাদেরকে বুঝতে দেই নি স্বাধীনতার প্রকৃত মর্মার্থ কি। কারন স্বাধীনতার অর্থ আমরা যদি একবার বুঝে ফেলি তবে এই স্বাধীনতার বনিকদের বাণিজ্যে যে চরম ভাটা পরবে। স্বাধীনতা ব্যবসা এমন এক ব্যবসা যেখানে পুজি অন্যের শ্রম অন্যের কিন্তু লাভ পুরোটাই নিজের। আমাদেরকে অন্যের বানিজ্যের পুজি হিসাবে খাটানো হতেই থাকবে যদি না আমরা বুঝি এই স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ কি।

প্রকৃত অর্থে ১৭৫৭ সালে আমাদের স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছে তা আর কখনো উদিত হয় নি। এর পরে যা হয়েছে তা নতুন বোতলে পুরানো মদ। ১৭৫৭ ব্রিটিশ বেনিয়ারা আমাদেরকে যে তাদের কলোনিতে পরিণত করেছিল আজ অবধি আমরা তাদের কলোনিই রয়ে গেলাম। তবে হ্যা, সে কলোনির অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে, প্রযুক্তিকায়ন হয়েছে। আগে কলোনি করতে বিরাট একটা এলাকার দরকার হতো আর এখন এত বড় জায়গার দরকার হয় না। শহরের কেন্দ্রস্থলে কূটনৈতিক পাড়ায় একটা বড়সড় বাড়িই যথেষ্ট। আমাদের পূর্ব প্রজন্ম কলোনির অধিবাসীদের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকাত। আর নতুন প্রজন্ম এই কলোনির অধিবাসীদের একটি সাক্ষাতের জন্য সারা রাত লাইনে দাড়িয়ে থাকতে রাজি। আমাদের আগের প্রজন্মের মাতব্বরেরা কলোনির আনুগত্য স্বীকার করেছেলিন অনেকটা বাধ্য ও নিরুপায় হয়ে। আর আমরা, আমাদের বর্তমান প্রনজন্মের মোড়লেরা এই কলোনিতে একটি চায়ের দাওয়াত পেলে নিজকে ধন্য মনে করি। আগের প্রজন্মে যেমন ছিল মীর জাফর তেমনি ছিল সিরাজুদ্দৌলা। বর্তমান প্রজন্মে আছে শুধুই মীর জাফর আর মীর জাফর। এখানে সিরাজুদ্দৌলার দেখা মেলা ভার! আগের প্রজন্মের মীর জাফরেরা ছিল ঘৃণিত। আর বর্তমান প্রজন্মের মীর জাফরেরা চরম শ্রদ্ধেয়। তাই বলতে হচ্ছে আমরা ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা অর্জন করি নি। বরং দিনে দিনে আমাদের পরাধীনতার শেকল আরও মজবুত হয়েছে, আরও গভীর হয়েছে। আমাদের উন্নতি শুধু এটাই যে, আগে আমরা মিথ্যা স্বাধীনতার দাবি করতাম না, কিন্তু এখন করি।

সময়ের ব্যবধানে আমাদের এই দাসত্ব ও গোলামী নতুন রুপ ধারন করেছে। আগে পশ্চিমারা সাগর মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আসত আমাদের শাসন-শোষণ করতে, কিন্তু এখন তাদের কে আর আমাদের কাছে সাগর মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আসতে হয় না। প্রকৃত পক্ষে তারা তখনই এদেশ ত্যাগ করেছে যখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে, আমাদেরকে শাসন করতে তাদের আর এখানে সশরীরে থাকার দরকার নেই। আমরা অনেকেই তাদেরকে বিতাড়িত করার গৌরবে গর্বিত কিন্তু প্রকৃত অর্থে তাদেরকে আমরা বিতাড়িত করি নি, তারা নিজেরাই চলে গিয়েছিল। তারা চলে গিয়েছিল এই জন্যেই যে, আমাদের কে শাসন করতে তাদের আর এখানে সশরীরে থাকার দরকার নেই। কারণ লন্ডন নিউইয়র্কে বসেই আমাদের মাথার উপর ছরি ঘোরানোর ব্যবস্থা তারা ইতিমধ্যে করে নিয়েছে। আমাদের কে রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে নিয়ন্ত্রন করার জন্য তারা যে সমস্ত কৌশল নিয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাঁচটি নিচে আলোচনা করা হলঃ-


1. তারা শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এমন এক প্রজন্ম তৈরি করেছিল যারা দেখতে হবে দেশীয় কিন্তু কর্ম ও চিন্তায় হবে ইউরোপীয়। তাদের নাম হবে মুসলিম কিন্তু চিন্তাধারা হবে ধর্মনিরপেক্ষ। তারা দেশপ্রেমের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলবে কিন্তু তাদের অন্তরে থাকবে পশ্চিমা প্রীতি। তাদের চিন্তায় যারা একমত হবে না তাদেরকে তারা নানাভাবে মূর্খ, গেয়ো, সেকেলে, মধ্যযুগীয় আর ধর্মান্ধ বলে অন্যের সামনে উপাস্থাপন করবে। অপরদিকে এদেরকে সরকারের বড় বড় পোস্টে বসিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বানিয়ে দেওয়া হল। ফলে অন্যরা দেখল, আরে এ পথেই তো দেখছি সাফল্য। ফলে কে কার চেয়ে বেশি শিক্ষিত একা অধিকতর পশ্চিমী- সেই প্রমাণে প্রতিযোগীতায় নেমে পড়লো। বর্তমানে এই শিক্ষা ব্যবস্থার বিবর্তন হয়েছে। এখন পশ্চিমারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু রেখে গেছে তাদের গোলামি’র শিক্ষা ব্যবস্থা। আর শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে গেছে, তাদের তৈরি করা কিছু গোলামদের হাতে। লেটেস্ট আপডেটঃ আগে পশ্চিমারা এদেশে আসত গোলাম তৈরি করতে, আর এখন গোলামরা পশ্চিমে যায় গোলামতর, গোলামতম হতে। আগে গোলামদের অনেক মূল্যায়ন ছিল, কিন্তু এখন নেই। এখন মূল্যায়ন পেতে হলে গোলামতর অথবা গোলামতম হতে হয়।

2. তারা দেখল শুধু শিক্ষা বাবস্থা দিয়ে সবাইকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা নতুন আরেকটা ব্রেন ওয়াশিং মেশিন আবিষ্কার করল- মিডিয়া। তারা একটা জিনিস বুঝতে পারল, ছাপার অক্ষরে যাই প্রকাশ করা হয় অধিকাংশ মানুষ যাচাই বাচাই না করেই তা বিশ্বাস করে। তাই তারা একটার পরে একটা মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করল। তারা আরও একটি বিষয় উপলব্ধি করল, জনগণের ভিন্ন মতের প্রতি একটা প্রাকৃতিক আকর্ষণ রয়েছে। তাই তারা অনেকগুল পত্রিকা খুলে বসল আর একেকটা থেকে একেক রকম মত প্রকাশ করতে শুরু করলো। আর জনগণ মনে করল আমাদের মিডিয়া স্বাধীন এবং নিরেপেক্ষ ভাবে সংবাদ প্রকাশ করে চলেছে। কিন্তু জনগণ এই মিডিয়া সিন্ডিকেটের বাহিরে যেতে পারল না। তারা হয়ে রইল নিয়ন্ত্রিত বিরোধী মতাদর্শী।বর্তমান অবস্থাঃ রইটারস, এপি, এএফপি, বিবিসি, সিএনএন শুধু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমই নিয়ন্ত্রণ করে না, এরাই তৈরি করে স্থানীয় মিডিয়ার নীতিমালা কি হবে। আমাদের দেশীয় মিডিয়া নামেই স্বাধীন, আসলে তারা আন্তর্জাতিক মিডিয়া চক্রের গোলামি করে চলেছে।

3. ব্রিটিশরা জানত তারা এখানে চিরদিন থাকবে না। তাদের হাতে তৈরি গোলামদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একদিন চলে যাবে। তাদের পোষা গোলাম আর দালালরাই যেন চিরদিন আমাদের দেশের শাসন ক্ষমতায় থাকে সে জন্য তারা আমাদের এখানে গণতন্ত্রের বাজারজাতকরণ করল। আমাদের কে শেখাল ‘গণতন্ত্রের কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকেলও এটাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য শাসন ব্যবস্থা’। এর কারন হিসাবে বলা হল, এটা নাকি জনগণের শাসন। এতে জনগণই নিজের ভাগ্যের নিজেই বিধাতা! কি চমৎকার কথা! কিন্তু আসলে কি গণতন্ত্র জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে? নাকি ব্রিটিশ আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করে? কি করে এটা মনে করা যায় যে, এই চরম সম্রাজ্যবাদি আম্রিকা ব্রিটেন আমাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করবে? আজও আম্রিকা দেশে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস ভাবে বোমা মেরে চলেছে। হয় গণতন্ত্র না হয় বুলেট! কেন আম্রিকা তৃতীয় বিশ্বের জনগণের গণতন্ত্রের অধিকার আদায়ের জন্য এত বুলেট বোমা মেরে চলেছে? কোন সুস্থ বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না যে, আমেরিকা যে গণতন্ত্রের জন্য বোমা ফেলতেছে সে গণতন্ত্রে আমাদের কোন স্বার্থ নিহিত আছে।

প্রথমেই প্রশ্ন জাগে, যে ব্রিটিশরা আমাদের দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ছিল তারা কি নিজেরা আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক ভাবে দখল করেছিল? তারা কি কোন গণভোটের আয়োজন করেছিল যেখানে আমরা মত দিয়েছিলাম আমাদের দেশকে তারা কলোনি করতে পারবে এই মর্মে? নিশ্চয় তারা এমনটি করে নি। তারা এসেছিল বণিকের ছদ্দাবরনে। নানা কূট কৌশল এবং সর্বশেষ মীরজাফরদের সহযোগিতায় যুদ্ধ করে আমাদের কে তাদের কলোনিতে পরিণত করেছিল। এই ব্রিটিশরাই আবার আমাদেরকে গণতান্ত্রিক অধিকার শেখাল। কি চমৎকার ভণ্ডামি!

ব্রিটিশরা আমাদের দেশে রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল তাদের কলোনি শাসন কে চিরস্থায়ী করতে। তার প্রমাণ দেশে দেশে সময়ে সময়ে তাদের আচারন দেখলে সহজেই বোঝা যায়। ইরানের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিল মোহাম্মাদ মোসাদ্দেক। তিনি দেখলেন ইরানের তেল সম্পদের সিংহভাগ ব্রিটিশ কোম্পানি বিপি নিয়ে যাচ্ছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এই তেল সম্পদ দিয়ে ইরানের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করবেন। তিনি সব তেল ক্ষেত্রকে জাতীয়করণ করলেন। কিন্তু এতে খেপে গেল ব্রিটিশ সরকার। নালিস করল আমেরিকার কাছে। আমেরিকা CIA কে নিয়োযিত করল মোসাদ্দেককে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য। CIA খুজে বের করল দালাল রেজা শাহ পাহলভীকে। তাকে দিয়ে উৎখাত করল গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীকে। এরপর স্বৈরশাসক রেজা শাহ ইরানের তেল ক্ষেত্র গুলকে আবার তুলে দিল ব্রিটিশ-আমেরিকার সম্রাজ্যবাদী তেল কোম্পানিগুলোর হাতে। অতএব গণতন্ত্র ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণের শাসন বলে বিবেচিত হবে যতক্ষণ পর্যন্ত ‘জনগণের শাসক’ ব্রিটিশ আমেরিকার গোলামী ও দালালী করবে।

অপরদিকে কোন দেশের অগণতান্ত্রিক শাসক যদি পশ্চিমাদের গোলামী করে, ফ্রিতে তেল বিক্রি করে তবে গণতন্ত্রের প্রবক্তাদের কোনই সমস্যা নেই। নতুবা তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অবরোধ এমনকি যুদ্ধ পর্যন্ত ঘোষণা করবে। যেমন করেছে আফগানিস্থান ও ইরাকে। তালেবান শাসিত আফগানিস্থান ও আল সৌদ শাসিত সৌদি আরব- উভয় জায়গাতেই গণতন্ত্র অনুপস্থিত। এবং উভয় জায়গাতেই শরিয়া আইন চালু ছিল। তারা তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে করে নাই কেন? কারন সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের মধ্যে তাদের এক নম্বর দালাল। তাদের দালালী করলে সব জায়েজ, আর না করলে গন্ত্রতন্ত্রের জন্য আহাজারি! প্রকৃত পক্ষে সৌদি আরব সহ অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলতে গণতন্ত্র না থাকার জন্য আমেরিকাই দায়ি। ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য দখল করে নেয় এবং পরে সেগুলোকে টুকরো টুকরো করে এক একজন দালালের কাছে হস্তান্তর করে। পরে যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অবসান হয় এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের শুরু হয় তখন থেকে আমেরিকা এদেরকে অস্ত্রসস্ত্র টাকা পয়সা দিয়ে লালন পালন করে আসছে। এই মুহূর্তে সৌদি আরবে ১৫ হাজারেরও বেশি আমেরিকান সৈন্য আছে আল সৌদ (সৌদি রাজপরিবার) এর নিরাপত্তার জন্য। সৌদি আরবের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতেছে আমেরিকা! তাহলে বুঝুন, এদের প্রীতিটা কোথায়? যেখানকার জনগণকে যে বড়ি খাওয়াইলে কাজ হয় এরা সেখানে সে বড়িই খাওয়ায়। আমাদের কে খাওয়াইছে গণতন্ত্রের বড়ি, আরবদের খাওয়াইছে রাজতন্ত্র/স্বৈরতন্ত্রের বড়ি। মধ্য প্রাচ্যে গণতন্ত্র থাকলে আমেরিকা কোনও সুবিধা করতে পারত না। অন্য সব দিক বাদ দিয়ে একটা বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যায় যে আমেরিকা কোন দিনই গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্র প্রধানের কাছ থেকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি আদায় করতে পারত না। কারন আরবদের ৯৯ শতাংশই ইসরায়েল বিরোধী। একারণে হোসনি মোবারক, বেন আলি আর আলি আব্দুল্লাহ সালেহের এর মত অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসকদের সাথে এদের কোনই সমস্যা ছিল না। যত সমস্যা গাদ্দাফি, মোল্লা ওমর আর সাদ্দাম হোসনের সাথে।

তাদের অন্যতম পলিসি হল, divide and rule. গণতন্ত্র দেশের মানুষকে খণ্ডে খণ্ডে ভাগ করে ফেলে। আজকে আমার দেশের ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, হকার, ওলামা, কাজের বুয়া, রিক্সা চালক, পতিতা থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক, রাখাল, জেলেরা পর্যন্ত বিভক্ত। একজন আরেকজনের বিরোধীতা করে শুধুমাত্র অন্য দল করার কারনে। এভাবে দেশের প্রতিটা সম্প্রদায় যদি বিভক্ত থাকে তাহলে সে দেশ কি করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাড়াতে পারবে? এই জন্য আমাদের শাসক গোষ্ঠী এতই দুর্বল যে তারা সবসময় অপেক্ষায় থাকে কখন ‘রাষ্ট্রদূতের’ বাসায় এক কাপ চায়ের দাওয়াত আসবে। অবস্থা দেখলে মনে হয় যেন এদের এক কাপ চা কিনে খাওয়ার সামর্থ্যও নেই!আশা করি এতক্ষণে বুঝেছেন কেন ওরা গণতন্ত্রের জন্য এত মায়া কান্না করে। কেন ওরা বুলেট দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে বেড়ায় দেশে দেশে?

আর আদর্শ গণতন্ত্র বলে কোথাও কিছু নেই। অনেকে আমেরিকার গণতন্ত্রের উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু পৃথিবীর নিকৃষ্টতম গণতন্ত্র হল আমেরিকার গণতন্ত্র। আমেরিকাতে যা চলে সেটা গণতন্ত্র নয়,তা হচ্ছে Oligarchy (সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একদল ক্ষুদ্র ইহুদী গোষ্ঠীর শাসন)।

4. ১৬শ, ১৭শ শতাব্দীতে ব্রিটিশরা সমগ্র পৃথিবীকে কলোনিতে পরিণত করে। এরপর তারা কলোনি বিশ্বে এক অদ্ভুত জিনিস চালু করে। এর নাম হচ্ছে কাগুজের মুদ্রা। তারা প্রথমে কাগুজে মুদ্রা চালু করেছিল, স্বর্ণ বা রোপ্যের বিনিময়ে রশিদ হিসাবে। তবে তাদের মনের মধ্যে লুকায়িত ছিল অসৎ চিন্তা। তারা প্রথমে স্বর্ণের দ্বিগুণ কাগজের টাকা ছাপায়। পরে তিনগুন, চারগুন এভাবে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে প্রকৃত স্বর্ণ আর কাগজের রশিদের মধ্যকার ব্যবধান। বর্তমানে তারা স্বর্ণ এবং কাগজের টাকার মধ্যে সকল সম্পর্কের আবসান ঘটিয়েছে।

চিন্তা করে দেখুন, আমেরিকা ভুয়া ডলার ছাপায়ে আমার দেশের ভেতর যেকোন যায়গা থেকে যা কিছু খুশি কিনতে পারে। কিন্তু আমি আপনি যদি এক বস্তা বাংলাদেশী টাকা নিয়ে নিউইয়র্কে যাই তবে তা দিয়ে কি এক কাপ কফিও কিনতে পারব? পারব না। স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসীদের কাছে আমার প্রশ্ন, একটি দেশের মুদ্রা সে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাহলে ভিন্ন একটি দেশের মুদ্রা কেন আজ তোমার দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে? এতে কি তোমার স্বাধীনতার চেতনায় কোন আঘাত লাগে না? নাকি আমেরিকার গোলামীর মধ্যেই তোমার স্বাধীনতার স্বার্থকতা নিহিত?

5. তোমার কথা বলার ধরণ, তোমার পোশাকের ধরণ, তোমার আচার-আচারন সবকিছুইতেই আছে পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণ। তারপরও তুমি দাবি কর নিজেকে স্বাধীন জাতি হিসাবে!!!। তোমার জীবনের শুরুতে যে জন্মদিন তুমি পালন কর এটাও এসেছে পশ্চিমা জাতির সংস্কৃতি থেকে। কিন্তু এতে তোমার স্বাধীনতার চেতনায় একটুও আঘাত লাগে না। কারন এটা এসেছে যে তোমার প্রভুর নিকট থেকে! তুমি যে বাংলিশ কথা বল এটা তোমার স্বাধীনতার চেতনায় আঘাত করে না। বরং এতেই তোমার স্বাধীনতা বিকশিত হয়। তুমি পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পড়ে তোমার স্বাধীনতার চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাও কিন্তু তোমার পূর্ব পুরুষদের পোশাক যারা পড়ে তাদেরকে তুমি আনকালচারড বল। তুমি পশ্চিম থেকে আমদানি করেছ টি শার্ট, ব্লু জিন্স আর মিনি স্কাট। এতে তোমার স্বাধীনতার চেতনায় কোনই ব্যঘাত ঘটে নি!!!।

তুমি যখন খুশি যার সাথে খুশী যেখানে খুশি মেতে উঠবা আদিম উন্মত্ততাই, এটাই তোমার কাছে স্বাধীনতার সংজ্ঞা। ভাল, তুমি যদি এভাবেই স্বাধীনতাকে সংজ্ঞায়িত করতে চাও তবে করতে পারো, আমার কোনই আপত্তি নেই। কিন্তু আমার আপত্তিটা হয় তখনই যখন তোমার এই স্বাধীনতা আরেক জনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তোমার স্বাধীনতাকে তুলনা করা যায় ট্রেনের বগির সাথে। ট্রেনের বগি সবসময় ইঞ্জিনকে অনুসরন করে। ইহা সেই গতিতে যেতে পারে ইঞ্জিন ইহাকে যেই গতিতে যেতে অনুমতি দেয়। ইহার পক্ষে কখনই সম্ভব হয় না ইঞ্জিনের আগে যেতে। তোমার ইঞ্জিন হচ্ছে তোমার প্রভু পশ্চিমা বিশ্ব। বিশ বছর আগে ওরা যা করত এখন তুমি তাই কর। ওরা এখন যা করে তুমি বিশ বছর পরে তাই করবে। ওরা বিশ বছর আগে সমকামিতা অবৈধ বলত, তুমি এখন অবৈধ বল। ওরা এখন সমকামিতাকে বৈধতা দিয়েছে, তুমিও দিবা আজ থেকে বিশ বছর পরে। অসলে তোমার কাছে স্বাধীনতা মানে পশ্চিমের গোলামী।
কিন্তু আমার কাছে স্বাধীনতা মানে, কারও গোলামি করা নয়। কারো অন্ধ অনুকরণের মধ্যে আমি কোন স্বাধীনতা খুজে পাই না। স্বাধীনতা হতে হবে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আগত পাখির মত যার কিনা হাজার মাইল পারি দিতে কোন ইমিগ্রেশন এর সম্মুখীন হতে হয় না। স্বাধীনতা মানে যখন যেখানে খুশি মুক্ত ভাবে বিচরণের স্বাধীনতা। তোমাকে স্বাধীনতা বণিকেরা পুকুরে ছেড়ে দিয়েছে সাতারের জন্য আর তুমি হাত পা আছড়িয়ে নিজেকে স্বাধীন মনে করছো। কিন্তু আমার কাছে স্বাধীনতা মানে অসীম সাগরের বুকে হারিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা বণিকেরা এই মুক্ত পৃথিবীকে ছোট ছোট কারাগারে পরিণত করেছে আর তোমাকে দিয়েছে সেই কারাগারে যেমন ইচ্ছা তেমন চলার স্বাধীনতা। ওরা আজ কেড়ে নিয়েছে আমার পবিত্র বায়তুল্লাহ ভ্রমনের আল্লাহ প্রদত্ত স্বাধীনতা টুকুও। সেখানে যেতেও আজ আমাকে ওই দালালদের মর্জির উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু আমি চাই এমন স্বাধীনতা যে স্বাধীনতার বলে আমি পূর্ব দিগন্ত থেকে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত পাখির মত বাধাহীন মুক্ত বিচরণ করতে পারবো।

তাই আসুন আরেকবার একটি স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য ঝাপিয়ে পড়ি যে যুদ্ধ আমাকে এনে দিবে এমন এক স্বাধীন রাষ্ট্র যেখানে থাকবে না কোন ক্ষুদ্র ভাষা বা ভৌগলিকের উপর ভিত্তি করে কোন বিভেদ। যে পৃথিবীতে আমার ভ্রমণ করতে লাগবে না কোন ভিসা বা পাসপোর্ট। যেখানে একাকি রমণী সানা থেকে হাদ’রা মাওত পর্যন্ত হেটে যাবে কিন্তু কোন জন কটূ কথা বলবে না তারে। থাকবে না জাতিসংঙ্ঘ নামের কোন ভণ্ডসঙ্ঘ। যে পৃথিবীতে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানেরা ইহুদি খ্রিস্টানের চায়ের দাওয়াতে যেতে লাগাবে না কোন হরোহুরি। ইহুদি খ্রিস্টানের থাকবে মুসলিমদের কাছে জিম্মি হিসাবে, আর মুসলিমরাও তাদের নিরাপত্তা বিধান করবে।

আমাদের সেই স্বাধীন রাষ্ট্র হবে পশ্চিমে স্পেন থেকে পূর্বে মায়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত। মুসলিমরা হবে এক জাতি, এক রাষ্ট্র। তারা একজন খলিফার অধিনে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। মুসলিমদের পবিত্রভুমিতে থাকবে না কোন ইহুদি বসতি। যে রাষ্ট্রে ইহুদি খ্রিস্টানেরা সামরিক পোশাক ত দূরের কথা, গলা উঁচিয়ে কথা বলার সাহসও পাবে না। যেখানে থাকবে শুধুই এক আল্লাহ’র শ্রেষ্টত্ব। শিল্পীর কোথায় সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে সে রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট।

“একাকি রমণী নির্জন পথে যাবে, কোন জন কটু কথা কবে না
কোন দিন পথে ঘাটে সম্পদের মহে, খুন আর রাহাজানি রবে না।”



"ভারত ,পশ্চিমা আগ্রাসন ও বিপন্ন স্বাধীনতা" // 

জাহিদুল আলম সেলিম
******************************
*
আওয়ামী লীগ নিজেকে স্বাধীনতার একমাত্র দাবিদার মনে করে।কিন্তু তাদের কর্মকান্ড দেখে বুঝা যাই যে একমাত্র তারাই বাংলাদেশর স্বাধীনতার জন্য সবথেকে বড় হুমকি।এবং বাংলাদেশ এখন সেই হুমকির মুখোমুখি। চীন বাংলাদেশের অভ্ভন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো পৃথিবীর সব দেশেই হস্তক্ষেপ করে সেটা আর নতুন করে বলার দরকার নাই।বর্তমানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আশার পর এই বিদেশী হস্তক্ষেপ অনেক বেড়ে গেছে।বিশেষ করে ভারতের।ভারত অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার বাংলাদেশের অভ্ভন্তরীণ রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ শুরু করছে।ভারত বাংলাদেশে সামরিক হামলা পর্যন্ত চালাবার হুমকি দেয়।আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাস না জানলে তাদের ষড়যন্ত্রের বেপারটা পুরাপুরি বুঝানো যাবেনা।সেটা স্বাধীনতার আগে থেকে (৪৭ এ পাকিস্তান সৃষ্টির পর) শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত চলছে। আমি ইতিহাসের একটু গোড়া থেকে শুরু করি-

ভারতীয় ষড়যন্ত্র, শোষণ ও আধিপত্যের মুখে বাংলাদশে আজ যে কতটা অসহায় সেটি কোন সচেতন বাংলাদেশীরই অজানা নয়। অনেকেই তা নিয়ে প্রতিবাদ মুখরও। কিন্তু বাংলাদেশের সামর্থ নেই গোলামীর এ বেড়াজাল থেকে থেকে বেরিয়ে আসার। আওয়ামী লীগের নেতাদের লক্ষ্য একমাত্র গদী –সেটি যদি ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেও হয়। সেটির প্রমাণ মেলে ভারতের সাথে তাজউদ্দীনের তথাকথিত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ১৯৭১য়ের অক্টোবরে স্বাক্ষরিত আত্মসমর্পণের চুক্তিটি দেখে। চুক্তির শর্তাবলী ছিলঃ
এক). বাংলাদেশের কোন সেনাবাহিনী থাকবে না, থাকবে একটি প্যারা মিলিটারি বাহিনী।
দুই). বাংলাদেশের প্রশাসনে ভারতীয়দের রাখতে হবে।
তিন). ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে স্থায়ী ভাবে থাকবে।
চার). সীমান্তে তিন মাইল এলাকা জুড়ে কোন মুক্ত বাণিজ্যিক এলাকা থাকবে। -(The Tide, January, 1990)।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এ হল বড় রকমের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা। তবে ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত সে চার দফা চুক্তি নিয়ে এগুতে হয়নি। ভারত সে চুক্তিতে যা চেয়েছিল, মুজিব সরকার দিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী। চুক্তিতে সীমান্তের তিন মাইল জুড়ে মুক্ত বাণিজ্যের কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে সমগ্র দেশ পরিণত হয় ভারতের বাজার। ইন্দিরা গান্ধি ভেবেছিল এতটুকু অর্জন করতে হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে ভারতীয়দের বসাতে হবে। কিন্তু তার সে ধারণা ভূল প্রমাণিত হয়েছে। শেখ মুজিব এবং তার রাজনৈতিক ক্যাডার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভারতীয়দের চেয়েও বেশী ভারতীয় স্বার্থের পাহারাদারিতে পরিণত হয়। ভারতীয় সাহায্য ভিক্ষা করতে যে নেতা নিজে ৬০এর দশকেই আগারতলা গিয়েছিলেন, এমন ভিক্ষুক নেতার কি কোন মেরুদন্ড থাকে? সে যে ভারতীয় সাহায্য অব্যাহত রাখার আশায় নিজ দেশের সীমান্ত খুলে দিবে সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? বাংলাদেশী ভূমি বেরুবাড়ী লাভে ভারতকে এজন্যই কোন যুদ্ধ লড়তে হয়নি। ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে মুজিব চুক্তি দস্তখত করে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছেন। অথচ চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশের ছিটমহল যেতে যে তিন বিঘা জমি প্রাপ্য ছিল সেটি আদায় করতে পারেননি। সে প্রাপ্য তিন বিঘা না পাওয়া নিয়ে শেখ মুজিবের যেমন কোন মাথা ব্যাথা ছিল না, প্রতিবাদও ছিল না। পরবর্তি কালের আওয়ামী লীগ সরকারেরও ছিল না। এবং আজও নেই। শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের একমাত্র ক্ষোভ শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অথচ পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে এক ইঞ্চি ভূমিও ভারতের হাতে হারাতে হয়নি। পাকিস্তান আমলে ভারত ফারাক্কা বাঁধও চালু করতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ভারতকে হুশিয়ার করে দিয়েছিলেন, ফারাক্কা চালু করা হলে বাঁধের উপর পাকিস্তান বোমা ফেলবে। ভারতের প্রতি শেখ মুজিবের এমন নতজানু চরিত্র সে সময়ের পাকিস্তানপন্থি নেতাকর্মী ও আলেমদের অজানা ছিল না। আর সে কারণেই আজ যা হচ্ছে সেদিন সেটিরই তারা সঠিক পূর্বাভাস দিতে পেরেছিলেন।

শেখ মুজিবের আসল রূপ প্রকাশ পায় ১৯৭১-এর পর। পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের ধুম্রজালে তিনি তার আসল চরিত্র বহুলাংশে লুকিয়ে রাখতে পারলেও সেটি বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের ন্যায় প্রকাশ পায় বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার পর। ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন। সে নির্বাচনের প্রাক্কালে শেখ মুজির ২৮শে অক্টোবর জাতির উদ্দেশ্যে রেডিও ও টিভি ভাষণ দেন। সে ভাষণে তিনি বহু অসত্য কথা বলেন। তার একটি নমুনা, “তদানীন্তন ক্ষমতাসীন দল (পাকিস্তান মুসলিম লীগ) সমগ্র দেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, সেই হীন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্যই আমাদের মহান নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ভাবেই আমরা পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আপোষহীন সংগ্রাম শুরু করি।”-(২৯ অক্টোবর ১৯৭০, দৈনিক পাকিস্তান, ঢাকা)। এ তথ্যটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। সত্য হলো, পাকিস্তান মুসলিম লীগ কখনই দেশকে একদলীয় রাষ্ট্র করার চেষ্টা করেনি। তার প্রমাণ, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে যখন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় তখন মুসলিম লীগ সরকারের পক্ষ থেকে এই নতুন দলটির প্রতিষ্ঠায় কোন রূপ বাধাই সৃষ্টি করা হয়নি।
পাকিস্তান কোন কালেই একদলীয় রাষ্ট্র ছিল না। সে দেশের কোন গণতান্ত্রিক সরকার দূরে থাক, এমন কি কোন সামরিক সরকারও এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি। শুধু আওয়ামী লীগ কেন, আরো বহু দল আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই পাকিস্তানে কাজ করছিল। এমন কি যে কংগ্রেস পাকিস্তান সৃষ্টির প্রচণ্ড বিরোধীতা করেছিল সে দলটিরও স্বাধীন ভাবে কাজ করার পূর্ণ অনুমতি ছিল। সংসদে এ দলটির সদস্যও ছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেশটির যে গণ-পরিষদ তথা পার্লামেন্ট গঠন করা হয় তার সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে। সে গণপরিষদ থেকে কংগ্রেস দলীয় সদস্যদের সদস্যপদও হরণ করা হয়নি। বহু দলীয় রাজনীতি চলেছে আইউব ও ইয়াহিয়া খানের আমলেও। খোদ আওয়ামী লীগও সে বহু দলীয় রাজনীতি থেকে পুরা ফায়দা নিয়েছে। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের শাসনামলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেটি ছিল অতি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। মুসলিম লীগে সে নির্বাচনে প্রচণ্ড ভাবে হেরে গিয়ে প্রমাণ করেছিল, তারা নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করার কোন চেষ্টা করেনি। সে ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ আওয়ামী লীগ তাদের শাসনামলে কোন কালেই দেয়নি। একদলীয় রাজনীতির শুরু পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার পর এবং সেটি বাংলাদেশে। সেটিও স্বয়ং শেখ মুজিবের হাতে। এবং সেটি বাকশাল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ফলে প্রমাণ মেলে, শেখ মুজিব ১৯৭০-এর নির্বাচনের শুরুটিই করেছিলেন ডাহা মিথ্যা কথা রটনার মধ্য দিয়ে।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর শেখ মুজিব আবির্ভূত হন একজন স্বৈরাচারি ফ্যাসীবাদী নেতা রূপে। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়,শুধু সমগ্র উপমহাদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নেতা যিনি একদলীয় শাসনের ঘোষণা দেন। এমন স্বৈরাচারি পদ্ধতির প্রতিষ্ঠা পাকিস্তানে যেমন কোন কালে হয়নি;ভারত, শ্রীলংকা ও নেপালেও হয়নি। সোভিয়েত রাশিয়া,পূর্ব ই্উরোপী দেশগুলি ও চীনের ন্যায় বাংলাদেশেও নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারি একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ মুজিরেব হাতে সর্বময় ক্ষমতা তুলে দেয়ার স্বার্থেই ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুযারিতে শাসনতন্ত্রে আনা হয় সংশোধনী। মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে ২৯৪জন পার্লামেন্ট সদস্যের ভোটে পার্লামেন্টারী পদ্ধতির সরকার রূপান্তরিত হয় প্রেসিডেন্সিয়াল ফরমে । শেখ মুজিব হন ৫ বৎসরের জন্য-অর্থাৎ ১৯৮০ সাল অবধি-নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারি প্রেসিডেন্ট এবং সে সাথে একদলীয় রাজনীতির সর্বেসর্বা। প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জন্য শেখ মুজিব জনতার আদালতে তথা ভোটে যাওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি। প্রতিষ্ঠা করেন, দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল বাকশাল। তালা ঝুলিয়ে দেন অন্যান্য দলের দফতরগুলিতে। ফরমান জারি করেন, ১৯৭৫ সালের ২৫শে মে’র মধ্যে সকল সংসদ সদস্যকে বাকশালে যোগ দান করতে হবে নইলে বাতিল ঘোষিত হবে তাদের সংসদ সদস্যপদ। তার দলীয় সদ্স্যরা তাকে আজীবন প্রেসিডেন্ট করার পাকা বন্দোবস্তও করছিল। ১৯৭৫এর ১৫ আগস্ট মারা না গিলে সে রেকর্ডও যে তিনি প্রতিষ্ঠা করতেন তা নিয়েও কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তার দলীয় নেতা ও কর্মীরা মাঠে ময়দানে এক নেতা-একদেশেরর ধারণা জোরে শোরে প্রচার করছিল। যে দলের কর্মীরা শেখ মুজিবকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী রূপে প্রবল বিশ্বাস রাখে তারা সে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীকে আজীবনের জন্য যে প্রেসিডেন্ট করতে চাইবে তাতেই বা বিস্ময়ের কি আছে?

দেখা যাক,কিরূপ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে শেখ মুজিবের নিজের ধারণা। একাত্তরে ৯ মাস যুদ্ধচলা অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিনের মুজিব নগর সরকার ছিল ভারতের আশ্রীত সরকার। এমন সরকারের কোন মেরুদণ্ড থাকে না। জনাব তাজউদ্দিন ও তার মন্ত্রীদের প্রতিদিনের থাকা,খাওয়া-দাওয়া ও ভরন-পোষনের সমুদয় ব্যয় বহন করত দিল্লীর ইন্দিরা গান্ধী সরকার। খাঁচার পাখির নিজে শিকার ধরার সামর্থ্য থাকে না,মনিব যা দেয় তাই খেতে হয়। মনিবের মন জোগাতে তখন তার শেখানো বুলিও তখন গাইতে হয়। তাজউদ্দিন সরকারের অবস্থাও তাই ছিল। ফলে তাকে দিয়ে ভারত সরকারও খুশী মত চুক্তিও সই করিয়ে নেয়। কোন স্বাধীন দেশ এমন চুক্তি কখনও স্বাক্ষর করে না।

তাজউদ্দিনের স্বাক্ষরিত ৭ দফা চুক্তিনামাটি ছিল নিম্নরূপঃ
১। ভারতীয় সমরবিদদের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে আধা সামরিক বাহিনী গঠন করা হইবে। গুরুত্বের দিক হইতে এবং অস্ত্রশস্ত্রে ও সংখ্যায় এই বাহিনী বাংলাদেশের মূল সামরিক বাহিনী হইতে বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ হইবে। (পরবর্তীকালে এই চুক্তির আলোকে রক্ষী বাহিনী গড়া হয়)।
২। ভারত হইতে সমরোপকরণ অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করিতে হইবে এবং ভারতীয় সমরবিদদের পরামর্শানুযায়ী তাহা করিতে হইবে।
৩। ভারতীয় পরামর্শেই বাংলাদেশের বহিঃবাণিজ্য কর্মসূচী নির্ধারণ করিতে হইবে।
৪। বাংলাদেশের বাৎসরিক ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ভারতীয় পরিকল্পনার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হইতে হইবে।
৫। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির অনুরূপ হইতে হইবে।
৬। ভারত-বাংলাদেশ চুক্তিগুলি ভারতীয় সম্মতি ব্যতীত বাতিল করা যাইবে না।
৭।ডিসেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ভারত যে কোন সময় যে কোন সংখ্যায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিতে পারিবে।

উপরে বর্ণিত চুক্তিগুলিতে মুজিব নগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তাজউদ্দিনের বদলে যখন শেখ মুজিব ক্ষমতা হাতে নিন তখনও কি ভারতের প্রতি এ নতজানু নীতিতে সামান্য পরিবর্তন এসেছিল? আসেনি। তাজউদ্দিন যে দাসখতে স্বাক্ষর করেছিলেন সেগুলো শেখ মুজিবও মেনে নেন। "১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার বুকে বঙ্গভবনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান স্বাক্ষরিত ২৫ সাল বন্ধুত্ব সহযোগিতা ও শান্তি চুক্তিতে সেগুলি সন্নিবেশিত করা হয়।" -(অলি আহাদ)

ভারত শুরু থেকেই চাচ্ছিল,বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভূগোল বিলুপ্ত করা যদি সম্ভব না হয়,অন্তত অর্থনৈতিক সীমান্ত লোপ পাক। যাতে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের বাজারে অবাধে প্রবেশাধিকার পায়। এটি ছিল ভারতীয় বিদেশ নীতির গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাটেজী। আর এ লক্ষ্যে ভারতকে বেশী দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। পাকিস্তান থেকে শেখ মুজিবের ফেরে আসার তিন মাসের মধ্যে ভারত তার থেকে সে অধিকার আদায় করে নেয়। রাজনৈতিক,সামরিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণে একটি দেশের দেশপ্রেমিক সরকারের যে প্রবল রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকে,সেটি শেখ মুজিব ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ছিল না। ভারত ১৯৭২ সালের ২৭ই মার্চ মুজিব সরকারের সাথে সীমান্তের ২০ মাইল অবাধ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করে। আর এ চুক্তি মোতাবেক ভারতীয় পণ্যের জন্য সমগ্র সীমান্ত খুলে দেন। ফলে ভারত অনায়াসেই পায় বৃহৎ বাজার। ভারত পূর্ব পাকিস্তানেরও প্রতিবেশী ছিল। কিন্তু অখণ্ড পাকিস্তান তার ২৩ বছরে একটি দিনের জন্যও ভারতীয় পণ্যের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়নি। প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা খরচ করে বরং সীমান্ত পাহারা দিয়েছে যাতে নিজ দেশের পণ্য বিদেশী হামলার মুখে না পড়ে। ফলে সে আমলে ভারতের চেয়ে দ্রুত গতিতে বেড়েছে শিল্পোন্নায়ন। বেড়েছিল কুঠির শিল্প। তখন বিড়ি তৈরী করেই লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত। ব্যাপক ভাবে বেড়েছিল তাঁতশিল্প। অথচ মুজিব সে নিরাপত্তা দিতে পারেনি দেশের ক্ষুদ্র শিল্পকে। ফলে দ্রুত ধস নেমেছে দেশের অর্থনীতি। দেশের কলকারখানা বন্ধ হয়েছে এবং ধ্বংস হয়েছে কুটির শিল্প। শুধু ভারতীয় পণ্যের জন্য বাজার করে দেয়ার লক্ষ্যে। ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ তখন বেকার হয়েছে। নেমে এসেছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। আর এতে অনাহারে প্রাণ হারিয়েছে বহু লক্ষ। মুজিব শুধু নিজের গদীর স্বার্থে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য এমন ভয়ানক মৃত্যু ও বিপদ ডেকে আনে।

১৯৭১-এর যুদ্ধে বিজয়ে ভারতের প্রভূত রাজনৈতিক ও সামরিক সুবিধা হয়েছিল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংসের মধ্য দিয়ে তারা নিজেরা যে শুধু বিপুল আনন্দ পেয়েছে তা নয় গভীর আনন্দ দিয়েছে বিশ্বের তাবত ইসলামের দুশমন কাফেরদের। ভারত তার প্রধানতম প্রতিদ্বন্দীকে দ্বিখণ্ডিত করে নিজে দক্ষিণ এশিয়ায় অপ্রতিদ্বন্দি হয়েছে সেটি সত্য। কিন্তু সবচেয়ে বড় লাভটি হয়েছিল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের বাজার লাভটি ছিল তার সবচেয়ে বড় বিজয়। এটি ছিল ভারতের পশ্চিম বাংলা,বিহার ও আসামের সম্মিলিত আভ্যন্তরীন বাজারের চেয়েও বিশাল। এক কালে এ বাজার দখলের জন্যই ইংরেজেরা হাজার হাজার মাইল দূর থেকে এ দেশটিতে ছুটে এসেছিল।

ভারতের বিনিয়োগ:
হাসিনা-বিরোধী আন্দোলন যতই তীব্রতর হচ্ছে ভারতের শাসক মহলে ততই বাড়ছে বাংলাদেশভীতি।শেখ হাসিনার উপর ভারতীয় নেতাদের প্রগাড় আস্থা। কারণ শেখ হাসিনা ভারতকে যতটা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে তা অন্য কোন দেশ থেকে পেতে হলে ভারতকে যুদ্ধ করতে হতো বা সেদেশের অর্থনীতিতে বিশাল বিনিয়োগ করতে হতো। যেরূপ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমুহ ও জাপানকে বন্ধু রূপে পেতে মার্কিনীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেসব দেশের পুননির্মাণে বহু বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। অথচ ভারত বাংলাদেশ থেকে সেটি পেয়েছে কোনরূপ অর্থব্যয় না করেই। কারণ চাকর বাকর পেতে বড় কিছুই বিনিয়োগ করতে হয় না। তারা ভাবে, এজন্য কিছু উচ্ছিষ্ট ব্যয়ই যথেষ্ঠ। ভারতীয় বর্ণহিন্দুরা শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা বা কোন বাঙালী মুসলমানকে কোনকালেই কি চাকর বাকরের চেয়ে বেশী কিছু ভেবেছে? ভারতের মুসলমানদেরও কি তারা তেমন কিছু ভাবে? সংখ্যায় তারা জনসংখ্যার শতকরা ১৬ ভাগ হলে কি হবে,সরকারি চাকুরিতে মুসলমানদের হিস্যা শতকরা ৪ ভাগেরও কম। পাশের পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের বঞ্চনা তো আরো করুণ।তারা সেখানে শতকরা ২৮ভাগ, অথচ সরকারি চাকুরিতে তাদেরকে শতকরা ৫ ভাগও দেয়া হয়নি।
ভারতের একমাত্র বিনিয়োগ বাংলাদেশের রাজনীতি ও মিডিয়াতে। সেটি দেশের রাজনীতি,সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তি,মিডিয়া, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতে ভারতসেবী বিশাল দাসবাহিনী প্রতিপালনে। এরূপ বিনিয়োগের ফলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুসলমানদের পিটাতে একাত্তরের ন্যায় নিজ দেশের সেনাবাহিনী নামাতে হচ্ছে না।প্রতিপালিত দাসরাই সেটি করছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ভারতের মূল স্ট্রাটেজী হলো, বাংলাদেশের বুকে ভারতীয় দাসদের শাসন প্রতিষ্ঠা। সেরূপ এক দাসশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ভারত একাত্তরে প্রকান্ড একটি যুদ্ধ লড়েছিল।তাদের সে যুদ্ধটির লক্ষ্য ভারতের পূর্ব সীমান্তে পাকিস্তানের ন্যায় আরেক স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা ছিল না। এ বিষয়ে ভারতীয় নেতাদের বক্তব্য আজও সুস্পষ্ট।২০০৮ সালে হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে ভারতের ষড়যন্ত্র ও বিনিয়োগটিও ছিল বিশাল। তাকে আবার ক্ষমতায় আনতে ভারত অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছে প্রকান্ড এক প্রচারযুদ্ধ। আসামের দৈনিক নববার্তা পত্রিকাটি গত ২১/১০/২০১৩ তারিখে প্রথম পৃষ্ঠায় লিড খবর ছাপে যে,হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারত এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। উক্ত পত্রিকায় ভাস্কর দেব আরো রিপোর্ট করে,ভারত গত ২০০৮ সনের নির্বাচনে ৮ শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি নির্বাচনেই ভারত বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে।

ভারতের বাংলাদেশ ভীতি:
প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগের পিছনে ভারতের এরূপ বিনিয়োগের হেতু কি? হেতু,স্বাধীন বাংলাদেশ-ভীতি। ভারত ভয় পায় বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমানের ইসলামের মৌল বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠা নিয়ে। ইতিহাসের ছাত্র মাত্রই জানে,১৯৪৭য়ে হিন্দুদের অখন্ড ভারত নির্মাণের স্বপ্নকে যারা ধুলিতে মিশিয়ে দিয়েছিল তারা পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ,উত্তরপ্রদেশ,বিহার বা অন্যকোন স্থানের মুসলমান নয়,তারা ছিল বাংলার মুসলমান। ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা থেকে ১৯৪০ সালে লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাব-পাশ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি পর্বে যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তারা ছিল এই বাংলার মুসলমানই। সে সময় মুসিলীম লীগের মূল দুর্গটি ছিল বাংলায়। আজও সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে যে ভূখন্ডটিতে সবচেয়ে বেশী মুসলমানের বাস সেটিও পাঞ্জাব, সিন্ধু, আফগানিস্তান নয়, বরং সেটি বাংলাদেশ। আর যেখানে এত মুসলমানের বাস সেখানে ইসলামের জাগরণের ভয় থেকেই যায়। কারণ সিংহের ঘুম যত দীর্ঘই হোক,সেটি মৃত্যু নয়। একসময় সে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বাংলার মুসলমান সাতচল্লিশে জেগে উঠেছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আবার ঘুমিয়ে পড়িছিল। আর সে ঘুমের ঘোরেই ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে তার দাসদের সহায়তায় বিরাট সর্বনাশটি করেছিল। কিন্তু বাংলার মুসলমানগণ যে আবার জেগে উঠেছে সে আলামত তো প্রচুর। আর তাতেই ভয় ধরেছে ভারতের।

আপনজন ও পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে:
ভারত এ মুহুর্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিজ স্বার্থের বিশ্বস্থ পাহারাদার চায়। সে কাজে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ যে ভারতের আপনজন সে সাক্ষ্যটি এসেছে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম এক নীতিনির্ধারকের মুখ থেকে।তিনি হলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী সুশীলকুমার শিন্দে। শেখ হাসিনার ভারতপ্রেমে তিনি এতটাই মোহিত যে,সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে “ভারতের আপনজন’ এবং “যেন পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে” রূপে আখ্যায়ীত করেছেন।সে খবরটি ছেপেছে কোলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা তার ৭ই নভেম্বর সংখ্যায়। সুশীলকুমার শিন্দে এ কথাটি বলেছেন পাঞ্জাবের আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্তের ধাঁচে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনির সূচনা পর্বের এক সমাবেশে।
প্রতিটি বিনিয়োগের পিছনেই থাকে মুনাফা লাভের আশা। মুনাফা লাভের সম্ভাবনা না থাকলে একটি টাকা ও একটি মুহুর্তও কেউ বিনিয়োগ করে না। আর বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগটি কোনকালেই খয়রাত ছিল না। খয়রাত ছিল না একাত্তরের যুদ্ধে ভারতীয়দের বিপুল অর্থ ও রক্তের বিসর্জনও। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতের মুনাফা তোলার মাত্রাটি অত্যাধিক বেড়ে যায় যখন শাসনক্ষমতা আওয়ামী লীগের হাতে যায়। ২০০৮ সালে হাসিনার ক্ষমতায় আসাতে ভারত যে প্রচুর মুনাফা তুলেছে সে সাক্ষ্যটি এসেছে খোদ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী শিন্দের মুখ থেকে। বাংলাদেশ থেকে তারা এতই নিয়েছে যে এখন সাধ জেগেছে কিছু প্রতিদান দেয়ার। তবে সেটি বাংলাদেশের জনগণকে নয়,সেটি খোদ হাসিনাকে। সে প্রতিদানটি তারা দিতে চায় তাকে পুণরায় ক্ষমতায় বসানোর মধ্যদিয়ে। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে ভারতের বিনিয়োগ এক হাজার কোটি রুপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দের ভাষায়ঃ “পাঁচ বছরে হাসিনার আমলে ঢাকা ভারতকে যে ভাবে সহযোগিতা করেছে,তার প্রতিদান দিতে নয়াদিল্লিও বদ্ধপরিকর”। তাছাড়া আগামী নির্বাচন শুধু বাংলাদেশীদের জন্যই নয়, ভারতীয়দের কাছেও অতি গুরুত্বপূর্ণ। সে অভিমতটি এসেছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা RAW য়ের বাংলাদেশ ইনচার্জ ও সিনিয়ার অফিসার শ্রী বিবেকানন্দ থেকে। তিনিও সম্প্রতি জানিয়েছেন,বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচন ভারতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর নির্বাচনের গুরুত্ব বাড়লে তাতে ভারতীয়দের বিনিয়োগও যে বাড়বে সেটিই তো স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ আজ চরম রাজনৈতীক সংকটে।দেশ আজ রক্তাত্ব গৃহযুদ্ধের মুখে। সংকটের মূল কারণ,গদি ছাড়তে রাজী নন হাসিনা। মেয়াদ শেষ হলেও প্রধানমন্ত্রীর গদিটি তার চাই। হাসিনা চায় না,একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক এবং সবাই একই সমতলে দাঁড়িযে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাক। হাসিনার এ কৌশলটি গোপন নয়,দুর্বোধ্যও নয়। তিনি চান,নিজ তদারকিতে নির্বাচন দিয়ে নিজের স্বৈরশাসনের মেয়াদকে আরো ৫ বছরের জন্য বাড়িয়ে নিতে। সেটি যেমন বিরোধী দল বুঝে। তেমনি সাধারণ জনগণও বুঝে। স্বৈরাচারি সরকারকে যে নির্বাচনে পরাজয় করা যায় না সেটিও জনগণ বুঝে। জনগণ সেটি বুঝেছে স্বৈরাচারি এরশাদের ১১ বছরের শাসন থেকে।এরশাদ নির্বাচন দিলেও সেটি ছিল তার স্বৈরশাসনের মেয়াদ বাড়নোর কৌশল। সমগ্র প্রশাসন ময়দানে নামতো তাকে বিজয়ী করার কাজে। ভোট জালিয়াতি তখন একটি প্রশাসনিক শিল্পে পরিণত হয়েছিল। তার মত ধিকৃত দুর্বৃত্তকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল একমাত্র রাজপথেই। হাসিনার বিরুদ্ধেও বিকল্প পথ নাই। তাকেও পরাজিত করতে হবে রাজপথেই।
বাংলাদেশে যতই রাজনৈতীক সংকট ঘনিভূত হচ্ছে ততই বাড়ছে বিদেশী ষড়যন্ত্র। এখন বিদেশীরা ব্যস্ত নিজেদের ঘরে ফসল তোলায়। তারা চায় তাদের কাঙ্খিত গোলাম ব্যক্তিটিকে ক্ষমতায় রাখতে। সে লক্ষ্যেই তাদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদুত মিস্টার মজিনা গিয়েছিলেন দিল্লিতে। তিনি দরবার করেছেন ভারতীয় কর্তাব্যক্তিদের সাথে। অপরদিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে,তারা চায় নির্বাচিত সরকারের অধীনে অর্থাৎ হাসিনার অধীনে নির্বাচন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনাও জানিয়েছেন সেটিকে তিনিও সমর্থণ করেন। এসবই পত্রিকার খবর। অপরদিকে কোলকাতার আনন্দবাজার গল্প ফেঁদেছে,বিএনপি নেতা জনাব তারেক জিয়া নাকি পাকিস্তানের আইএসআইয়ের দ্বারা পরিবেষ্ঠিত। ভারত সরকার নাকি তা নিয়ে বড়ই চিন্তিত। প্রশ্ন হলো,বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদ যে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র’য়ের এজেন্টদের দ্বারা প্লাবিত সে খবরটি কি আনন্দবাজারের জানে না? ভারতের দুশ্চিন্তা,হাসিনার পতন হলে বাংলাদেশ ইসলামপন্থিদের ঘাটিতে পরিণত হবে। বাংলাদেশ শতকরা ৯১% ভাগ মুসলমানের দেশ। আর মুসলমান থাকলে ইসলাম থাকবে তাতে ভারতের আপত্তির কি থাকতে পারে? ভারতে যদি মৌলবাদি বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে তবে ইসলামি মৌলবাদীরা বাংলাদেশে কেন ক্ষমতায় আসবে না?

ভারতীয় নেতাদের ইসলামভীতি এবং সে সাথে আইএসআই ভীতি এতটাই প্রবল যে বাংলাদেশের বুকে ইসলামি দলের কর্মী বা আওয়ামী লীগ বিরোধ কোন নেতাকে ভারতীয় নেতারা আইএসআইয়ের লোক ভিন্ন অন্য কিছু ভাবতে পারে না। এমন কি সেটি ভারতের অভ্যন্তরে বসবাসরত মুসলমানদের বেলায়ও। সম্প্রতি মোজাফফর নগরসহ উত্তর প্রদেশের বহু জেলায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দাঙ্গা অনুষ্ঠিত হলো। হাজার মুসলিম পরিবার এখনও নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরতে পারিনি। কিন্তু প্রতিবারের ন্যায় এবারও ভারত সরকার এ পর্যন্তু সে এলাকায় মুসলিম নিধনকারি কোন অপরাধিকেই খুঁজে পায়নি।যেন এত বড় হত্যাকান্ড কোন স্থানীয় অপরাধি ছাড়াই সংঘটিত হয়েছে। অপরাধী তখনও খুঁজে পায়নি যখন দিনেদুপুরে লক্ষ লক্ষ মানুষের চোখের সামনে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হলো। এই হলো ভারতীয় মানস। তবে সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি অপরাধি খুঁজে পেয়েছেন,এবং সেটি ভারতে নয় বরং ভারতের বাইরে। তার মতে সে অপরাধিটি হলো পকিস্তানি আইএসআই।। সম্প্রতি রাহুল গান্ধি এক সভায় বলেছেন,আইএসআই।য়ের লোক মোজাফ্ফর নগরের মুসলিম পরিবারের সাথে যোগযোগ রেখেছিল।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে বিদেশী হস্তক্ষেপ যে কতটা প্রবল এ হলো তার প্রমাণ।যে বিদেশী শক্তিগুলি আওয়ামী লীগকে একটি সাঁজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ৫ বছর আগে ক্ষমতায় এনেছিল তারাই এখন ময়দানে নেমেছে। সে বিদেশীদের মধ্যে ছিল ভারত,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেন। এরাই যেন বাংলাদেশের কিং মেকার, বাংলাদেশের জনগণ নয়। তারা যে আওয়ামী লীগের পক্ষ নিবে তার কারণ তো সুস্পষ্ট।আওয়ামী লীগ ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর বর্বরতার মধ্য দিয়ে বিদেশীদের কাছে প্রমাণিত করেছে রক্তেমাংসে তারা বাংলাদেশের হলেও চিন্তা-চেতনায় তারা তাদেরই লোক।এ বিদেশী কোয়ালিশনটিও চায়,যে কোন মূল্যে বাংলাদেশে ইসলামের জাগরন প্রতিহত করা।সেটি গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে হলেও।এসব ইসলাম দুষমন সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে গণতন্ত্রের মূল্য সামান্যই। তাই মিশরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসীকে হটিয়ে সামরিক জান্তাদের সমর্থণ দিতে তাদের বিবেকে দংশন হয়নি। তাদের একই রূপ নীতি দেখা গেছে ইরানে,আলজিরিয়া ও ফিলিস্তিনে। ইরানে স্বৈরাচারি শাহের অপসারণ যেমন তাদের পছন্দ হয়নি,তেমনি আলজিরিয়া ও ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের বিপুল বিজয়ও তাদের পছন্দ হয়নি। বাংলাদেশে ইসলাম রুখতে যাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তারা যুদ্ধ করতে চায় তারা আর কেউ নয়,তারা হলো ইসলামের শত্রুপক্ষ ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট। বিদেশের এ দাসগণ সে কাজের জন্য প্রস্তুতও। মার্কিন দূত মজিনা দিল্লি থেকে ফিরেছে। এখন দিল্লি যাচ্ছেন এরশাদ ও দিপুমনি। এরা যে বাংলাদেশকে ভারতের একটি প্রদেশ ভিন্ন অন্য কিছু ভাবে না এ হলো তার প্রমাণ। এদের হাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে কতটা বিপন্ন সেটি বুঝে উঠা কি এতটাই কঠিন?

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি নাকচ করে ০১/০৯/১৩ তারিখে ঢাকায় ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন,"জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। সংবিধান সংশোধন করেছি। যা হবে সংবিধান মোতাবেক হবে। তা থেকে একচুলও নড়া হবে না, ব্যাস।" প্রশ্ন হলো, এটি কি শেখ হাসিনার সংবিধানপ্রীতি না নিরেট ক্ষমতালিপ্সা? “সংবিধান থেকে একচুল নড়বেন না”-এটিও কম মিথ্যাচার? শেখ মুজিবের ন্যায় হাসিনাও চায়,যে কোন মূল্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিজ হাতে রাখতে। সে স্বৈরাচারি লক্ষ্য পূরণে মুজিব লাল বাহিনী, রক্ষিবাহিনী ও দলীয় গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে তিরিশ-চল্লিশ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল।পিতার দেখানো সে পথ বেয়ে হাসিনাও হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার কর্মীকে হতাহত করলো শাপলা চত্বরে। এবং গ্রেফতার করেছে জামায়াত-শিবিরের বহু হাজার নেতাকর্মীকে। হত্যা ও গুম করেছে বহু বিএনপি নেতাকর্মীকেও।এটি কি কোন শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ? শান্তিপূর্ণ রাজনীতি যেমন মুজিব চায়নি, তেমনি হাসিনাও চায় না। দেশকে অশান্তময়, যুদ্ধময় ও রক্তাত্ব করাই যে তাদের নীতি -সে প্রমাণও কি কম?
আওয়ামী রাজনীতির মূল রোগটি হলো,তারা বিদেশী প্রভু নির্ভর। দেশের রাজনীতিতে বিদেশী প্রভুদের ডেকে আনাই তাদের স্বভাব।একাত্তরে বাংলাদেশের রাজনীতি তাই আর বাংলাদেশে থাকেনি,সেটি চলে গেছে দিল্লিতে। তেমনি এবারও সে একই খেলাই শুরু হয়েছে।তাদের রাজনীতি তাই শুধু যে গণতন্ত্র বিপন্ন হয় তা নয়,দেশের স্বাধীনতাও বিপন্ন হয়।মুজিব আমলে তো সেটিই হয়েছিল। বাংলাদেশে দেশপ্রেমিক জনগণের ঘাড়ে এ মুহুর্তে তাই বিশাল দায়ভার। সেটি শুধু জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা নয়,দেশের স্বাধীনতা রক্ষাও। যে গণজাগরণ আজ শুরু হয়েছে,এখন সবার দায়িত্ব হলো সেটিকে চুড়ান্ত বিজয় অবধি অব্যাহত রাখা। লড়াইয়ের এখনই সময়। স্বাধীনতার শত্রু নির্মূলের এখনই মোক্ষম সুযোগ। তবে এ লড়াই শুধু হাসিনার অপসারণ নিয়ে নয়,বরং বিদেশের সেবাদাসদের শিকড় নির্মূল। নইলে তারা বার বার ফিরে আসবে এবং বিপদ বাড়াবে। একাজ শুধু বিএনপি,জামায়াত-শিবির বা হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের নয়,প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের।

Reference
********
1. সাহিদা বেগম, ২০০০; আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা: প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র, বাংলা একাডেমী, ঢাকা।
2. G.P. Bhattacharjee, 1973; Renaissance and Freedom Movement in Bangladesh, The Ninerva Associates, 7-B Lake Place: Calcutta 700029
3. আবুল মনসুর আহমদ, ১৯৮৯; আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, সৃজন প্রকাশনী লিমিটেড, করিম চেম্বার (৫ম তলা), ৯৯, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
4. Hasan Zaheer, 1994; The Separation of East Pakistan, Oxford University Press, Karachi.
5. Richard Sisson and Leo E. Rose, 1990; War and Secession: Pakistan, India and the Creation of Bangladesh, University of California Press, Barkley and Los Angeles, California, USA.
6. ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন,১৯৯৩;একাত্তরের স্মৃতি,নতুন সফর প্রকাশনী ৪৪,পুরানা পল্টন দোতালা,ঢাকা ১০০০

7. সা’দ আহম্মদ,২০০৬;আমার দেখা সমাজ ও রাজনীতির তিনকাল (বৃটিশ-ভারত,পাকিস্তান ও বাংলাদেশ),খোশরোজ কিতাব মহলো,১৫ বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০

8. সরকার শাহাবুদ্দীন আহম্মদ,২০০৪: আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল বুকস্‌ ফেয়ার, ৩৯ বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০

9. শাহেদ আলী,১৯৮৯;আমাদের সাহিত্যে ও ভাবনায় কায়েদে আজম, মুসলিম রেনেসাঁ আন্দোলন,১২৫ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা,ঢাকা ১০০০
10. সিরাজুল্ ইসলাম চৌধুরি, ২০০৮; দুই যাত্রায় এক যাত্রী, জাগৃতি প্রকাশনী,৩৩ আজিজ সুপার মার্কেট, নিচতলা, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০।




যে ইতিহাস জানে না দেশের ৯৯.৯% জনগন
-----------------------------------------
১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয় দিবস পালন করি।
অথচ এ দিনটিতেই বাঙ্গালির বিজয় ছিন্তাই করা হয়েছিল।

কারা করেছিল আরেকটু পড়লেই বুঝতে পারবেন।


১৬ই ডিসেম্বর সম্মিলিত মিত্র বাহীনির কাছে পাক বাহীনির আতবসমর্পন করার কথা ছিল।

কিন্তু রেসকর্স ময়দানে ১৬ই ডিসেম্বর পাক বাহিনি ইন্ডিয়ান বাহীনির কাছে আতব সমর্পন করে,...
তাও আবার এ শর্তে যে, ৭১ এ যুদ্ধি সংহতিত হয় পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়ার মদ্ধে।

রেসকর্স ময়দানে একজন বাঙ্গালি সেনা অফিসার কে পর্যন্ত থাকতে দেয়া হয়নি।

৭১ এ বাংলাদেশ বাহিনির প্রধান ছিল জেনারেল ওসমান।তিনি যাতে রেসকর্স ময়দানে উপস্থিত হতে না পারেন সেজন্য সুকৌশলে আগেই তাকে জোর পুর্বক সিলেট পাঠিয়ে দেয়া হয়। অথচ তার প্রবল ইচ্ছা ছিল রেসকর্স এ বাঙ্গালি বাহিনির প্রতিনিধিত্ব করার। তাকে কেন থাকতে দেয়া হয়নি এতখনে নিশ্চয় আপনারা বুঝতে পারছেন।
এখন প্রশ্ন হল ১৬ই ডিসেম্বর জদি পাক বাহিনি শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান বাহীনির কাছে আতবসমর্পন করে থাকে তাহলে কিভাবে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস হয়?
#উল্লেখ্য রেস্কর্স মৈদানে পাকবাহীনি শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান বাহীনির কাছে আত্নসমর্পন করে এবং চুক্তি পত্রে কথাও বাংলাদেশ কথাটি লেখা হয়নি। বরং লেখা হয়েচে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের মদ্ধে যুদ্ধ।

এভাবে সুকৌশলে ইন্ডিয়ানরা আমাদের বিজয় জোর করে কেড়ে নেই যে কারনে পাকবাহিনীরা বাঙ্গালির কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয়নি।

আফসোস কিছু কিছু বাঙ্গালি এখন ভারতকে আব্বা ডাকে।
 
 
 ফটোতে লেখা ৯৫০০০ পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করছে ইন্ডিয়ার কাছে ১৯৭১ !!
এই ফটোটা আমি এক পাকিস্তানি ভাইয়ের প্রোফাইল থেকে কপি করেছি..

বাঙালিরা বুঝে ওরা স্বাধীন কিন্তু ওদেরযে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের গুলামী থেকে মক্ত করে নিজের গুলাম বানিয়ে এখেছে তার কোনো খবরই নাই আজ বাঙালিদের..
পাকিস্তানের মুতাবিক ওরা ৭১ বাঙালি মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়নি,পরাজিত হয়েছে একতা হিন্দু রাষ্ট্র ইন্ডিয়ার কাছে..

আমি যদিও কোনো পক্ষ নিচ্ছিনা কারণ এইসব জাতীয়তাব্দের ভিত্তিতে যুদ্ধ আমি সমর্থন করিনা..শুধু ওই যুদ্ধ সমর্থন করি যেইটা আল্লাহর দীনকে উচু করার জন্য এবং বাতিল শক্তিকে নিচু করার জন্য লরা হয় !!
 
 
 



শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস ?


যে ইতিহাস জানে না দেশের ৯৯.৯% জনগন
-----------------------------------------
১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয় দিবস পালন করি।
অথচ এ দিনটিতেই বাঙ্গালির বিজয় ছিন্তাই করা হয়েছিল।

কারা করেছিল আরেকটু পড়লেই বুঝতে পারবেন।

১৬ই ডিসেম্বর সম্মিলিত মিত্র বাহীনির কাছে পাক বাহীনির আতবসমর্পন করার কথা ছিল।
কিন্তু রেসকর্স ময়দানে ১৬ই ডিসেম্বর পাক বাহিনি ইন্ডিয়ান বাহীনির কাছে আতব সমর্পন করে,...
তাও আবার এ শর্তে যে, ৭১ এ যুদ্ধি সংহতিত হয় পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়ার মদ্ধে।

রেসকর্স ময়দানে একজন বাঙ্গালি সেনা অফিসার কে পর্যন্ত থাকতে দেয়া হয়নি।

৭১ এ বাংলাদেশ বাহিনির প্রধান ছিল জেনারেল ওসমান।তিনি যাতে রেসকর্স ময়দানে উপস্থিত হতে না পারেন সেজন্য সুকৌশলে আগেই তাকে জোর পুর্বক সিলেট পাঠিয়ে দেয়া হয়। অথচ তার প্রবল ইচ্ছা ছিল রেসকর্স এ বাঙ্গালি বাহিনির প্রতিনিধিত্ব করার। তাকে কেন থাকতে দেয়া হয়নি এতখনে নিশ্চয় আপনারা বুঝতে পারছেন।
এখন প্রশ্ন হল ১৬ই ডিসেম্বর জদি পাক বাহিনি শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান বাহীনির কাছে আতবসমর্পন করে থাকে তাহলে কিভাবে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস হয়?
#উল্লেখ্য রেস্কর্স মৈদানে পাকবাহীনি শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান বাহীনির কাছে আত্নসমর্পন করে এবং চুক্তি পত্রে কথাও বাংলাদেশ কথাটি লেখা হয়নি। বরং লেখা হয়েচে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের মদ্ধে যুদ্ধ।

এভাবে সুকৌশলে ইন্ডিয়ানরা আমাদের বিজয় জোর করে কেড়ে নেই যে কারনে পাকবাহিনীরা বাঙ্গালির কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয়নি।

আফসোস কিছু কিছু বাঙ্গালি এখন ভারতকে আব্বা ডাকে।

Miah Mohammad Abu Musa
 
ফটোতে লেখা ৯৫০০০ পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করছে ইন্ডিয়ার কাছে ১৯৭১ !!

এই ফটোটা আমি এক পাকিস্তানি ভাইয়ের প্রোফাইল থেকে কপি করেছি..
বাঙালিরা বুঝে ওরা স্বাধীন কিন্তু ওদেরযে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের গুলামী থেকে মক্ত করে নিজের গুলাম বানিয়ে এখেছে তার কোনো খবরই নাই আজ বাঙালিদের..
পাকিস্তানের মুতাবিক ওরা ৭১ বাঙালি মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়নি,পরাজিত হয়েছে একতা হিন্দু রাষ্ট্র ইন্ডিয়ার কাছে..

আমি যদিও কোনো পক্ষ নিচ্ছিনা কারণ এইসব জাতীয়তাব্দের ভিত্তিতে যুদ্ধ আমি সমর্থন করিনা..শুধু ওই যুদ্ধ সমর্থন করি যেইটা আল্লাহর দীনকে উচু করার জন্য এবং বাতিল শক্তিকে নিচু করার জন্য লরা হয় !! Abu Musliim 
 
 
 



সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প প্রায় ২৫ হাজার বিদেশী কর্মরত





~~~অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প খাতে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার বিদেশী কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে ২০ হাজারই ভারতীয়। একেক কারখানায় ১০ থেকে ২০ জন ভারতীয় মিলে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অপেক্ষকৃত অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন বলে দাবিদার এসব কর্মকর্তা এতটাই দাপুটে অবস্থানে রয়েছেন যে মালিকরা চাইলেও তাদের মাঝে বা তাদের ওপরে কোনো বাংলাদেশীকে বসাতে পারেন না। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের বিশ্বস্ত কোনো বাংলাদেশী বা আত্মীয়স্বজনকে বসাতে চাইলে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তারা। পেশাগত কারণেই আমেরিকা-ইউরোপে অবস্থানরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সাথে তাদের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তারপর কৌশলে নিজ কর্মস্থল কারখানাটি বিক্রি করে দেন ভারতীয়দের কাছে। ~~~অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের সাথে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করে যারা টিকতে পারছে না তারাও যুক্ত হয়েছে এই চক্রের সাথে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় ভালো অবস্থানে থাকা ভারতীয়রা উঠেপড়ে লেগেছে এর বিরুদ্ধে। নিজেদের অস্থাভাজন এই মিড লেবেল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে তারা একের পর এক নামকরা কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন, আবার কৌশলে কিনেও নিচ্ছেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, একদা বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের অহঙ্কার হিসেবে পরিচিত এসকিউ, ক্রিস্টাল, মাস্টার্ড, হলিউড, শান্তা, রোজ, ফরচুনা, ট্রাস্ট, এজাক্স, শাহরিয়ার, স্টারলি, ইউনিয়ন প্রমুখ দেশসেরা গার্মেন্ট কারখানার মালিক এখন ভারতীয়রা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজ দেশের ওই ম্যানেজারদের যোগসাজশে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ, আমেরিকান, কানাডিয়ান নাগরিকেরা কিনে নিয়েছেন এসব কারখানা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ নয়া দিগন্তকে বলেন, “কারখানাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা এসব কর্মকর্তা এতটাই ক্ষমতাশালী যে, অনেক সময় স্বল্পশিক্ষিত মালিকদের তারাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। কৌশলে তারাই শ্রমিকদের সাথে মালিকদের সম্পর্ক তিক্ত করেন। একেক পক্ষকে একেক রকম বুঝিয়ে অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলেন।কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি পোশাক শিল্প খাতে কর্মরত বিদেশীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি”। ~~~অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জন্মসূত্রে ভারতীয় হলেও বাংলাদেশে তারা বসবাস করেন নিজ দেশের মতোই। ভিসা-টিকিটের বালাই নেই। ইচ্ছেমতো এ দেশে আসেন, ইচ্ছে হলেই ভারতে যান। বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ ডলার নিয়ে গেলেও সরকারকে কোনো ট্যাক্স দেন না। সরকারি বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যও তাদের ঘাটায় না। কারণ তারা বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের ‘প্রাণ’। মার্চেন্ডাইজার, প্রোডাকশন ম্যানেজার, জেনারেল ম্যানেজার, ফাইন্যান্স ম্যানেজার, অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ম্যানেজার, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তারা নিয়োজিত। অর্ডার আনা থেকে শুরু করে পণ্য প্রেরণ পর্যন্ত সব গুরুত্বপূর্ণ কাজই হয়ে থাকে অপেক্ষাকৃত অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন এসব কর্মকর্তার হাত দিয়ে। কারখানার মালিক ও সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে সেতুবন্ধনের কাজটিও করে থাকেন তারা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রফতানি বাণিজ্যে ৮০ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প খাতের বেশির ভাগ উদ্যোক্তারই শিক্ষা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাদের অনেকেই কারখানার মালিক হয়েছেন শ্রমিক থেকে। আবার এমন অনেক কারখানাও রয়েছে যেগুলোর মূল মালিকেরা এ ব্যবসায়ের সাথে সরাসরি যুক্ত নন। সামান্য মালিকানা নিয়ে যিনি কারখানা দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি এক সময় শ্রমিক ছিলেন। টাকাওয়ালা কিছু লোককে ম্যানেজ করে নিজে কিছু শেয়ার নিয়ে কারখানা গড়ে তুলেছেন। কারখানার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করছেন মধ্যম পর্যায়ের ম্যানেজারেরা, যাদের বেশির ভাগই ভারত কিংবা শ্রীলঙ্কা বংশোদ্ভূত। এরাই মন চাইলে কারখানার ভালো করছেন, আবার মনের মধ্যে কোনো দূরভিসন্ধি এলে মালিকপক্ষকে কৌশলে পথে বসিয়ে দিচ্ছেন। ~~~অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত আট থেকে ১০ বছরে যেসব কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে তার বেশির ভাগই ছিল কমপ্লায়েন্ট। এসব কারখানায় কর্মপরিবেশ ভালো, নিয়মিত বেতন-ভাতা দেয়া হয়, ওভার টাইম দেয়া হয়, টিফিন থেকে শুরু করে বেশির ভাগ যুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেই এসব কারখানার শ্রমিকেরা সন্তুষ্ট। অথচ কখনো রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক মৃত্যুর অজুহাতে, কখনো শ্রমিক গুম কিংবা টয়লেটে ভূত থাকার মতো গুজব ছড়িয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করানো হচ্ছে এসব কারখানায়। অপর দিকে যেসব কারখানায় নিয়মিত বেতন-ভাতা দেয়া হয় না, কাজের পরিবেশ নিন্মমানের এবং কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটছে শ্রমিক অসন্তোষ বা ভাঙচুরের ঘটনা এসব কারখানায় অনেক কম ক্ষেত্রেই ঘটছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তৈরী পোশাক শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল উদ্যোক্তা জানান, যেসব কারখানা বড় ও কমপ্লায়েন্ট সেগুলোর কাজের ভলিউমও বেশি। মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে বিদেশী কর্মকর্তাদের এখানে নিয়োগ করা হয়। তাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু কোনো কারণে মালিকের ওপর ুব্ধ হলে কিংবা কারখানার মালিক হওয়ার খায়েশ হলে তারা শ্রমিক অসন্তোষের মতো ঘটনা ঘটিয়ে কারখানা ধ্বংস করে দেন। স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক টাউট, ঝুট ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পক্ষকে লেলিয়ে দেয় কারখানার বিরুদ্ধে। অন্য দিকে ছোটখাটো কারখানাগুলো নিজেরা কোনো কাজ আনতে পারে না। অন্য কারখানার কাজ তারা সাব কন্ট্রাক্টে করে থাকে। এসব কারখানায় মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে বিদেশীদের পোষা হয় না। ফলে উসকানি দেয়া হয় না, ভাঙচুরও হয় না। vp সৌজন্যেঃ নয়া দিগন্ত রিপোর্টারঃ জিয়াউল হক মিজান লিংকঃ http://www.dailynayadiganta.com/welcome/post/21374